বগুড়া জেলার নামকরণের ইতিহাস:-
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১,২৭৯ থেকে ১,২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া (English:Bogra)। ইংরেজি উচ্চারন 'বগড়া' হলেও বাংলায় কালের বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে 'বগুড়া' শব্দে পরিচিতি পেয়েছে
Bogura Shatmatha
 
বগুড়া জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে বগুড়া বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। বাংলার একজন স্বাধীন সুলতান (১২৮৭–১২৯১) নাসিরউদ্দিন বুগরা খানের নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ গড়ে উঠেছিল এই বগুড়ায়। প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধনের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়, যা বগুড়া জেলায় অবস্থিত এবং এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে পরিচিত। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ও রাজধানী বলা হয়। এছাড়াও বগুড়া শিক্ষানগরী নামে পরিচিত৷ বগুড়া পৌরসভা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা। বর্তমানে বগুড়া সার্ক এর সংস্কৃতি রাজধানী।
 
 
 

👉👉👉ভৌগোলিক সীমানা:-

 ৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত।

বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট, উত্তর পশ্চিমে জয়পুরহাটের অংশবিশেষ,পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে নওগাঁ, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জের অংশবিশেষ এবং দক্ষিণ পূর্বে সিরাজগঞ্জের অবশিষ্ট অংশ বিদ্যমান। বগুড়ার পূর্বে জামালপুর থাকলেও এর স্থলভাগ সংযুক্তভাবে অবস্থিত নয়। 


বগুড়া ভৌগোলিকভাবে ভূমিকম্পের বিপজ্জনক বলয়ে অবস্থিত। তাছাড়া বগুড়া জেলা বরেন্দ্রভূমির অংশবিশেষ যা ধূসর ও লাল বর্ণের মাটির পরিচিতির জন্য উল্লেখ্য।

 

👉👉👉প্রশাসনিক এলাকাসমূহঃ-

বগুড়া জেলা ১৮২১ সালে জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলায় উপজেলার সংখ্যা মোট ১২ টি। পৌর সভার সংখ্যা ১২ টি, ইউনিয়ন রয়েছে মোট ১১১
টি। এছাড়া জেলায় ২,৬৯৫ টি গ্রাম, ১,৭৫৯ টি মৌজা রয়েছে। বগুড়া জেলার উপজেলা গুলি হল -

                                            শাজাহানপুর উপজেলা

                                            আদমদিঘী উপজেলা

                                             বগুড়া সদর উপজেলা

                                             ধুনট উপজেলা

                                            দুপচাঁচিয়া উপজেলা

                                            গাবতলী উপজেলা

                                            কাহালু উপজেলা

                                            নন্দীগ্রাম উপজেলা

                                            সারিয়াকান্দি উপজেলা

                                            শেরপুর উপজেলা

                                            শিবগঞ্জ উপজেলা, বগুড়া

                                            সোনাতলা উপজেলা

 

 

👉👉👉সংসদীয় আসনঃ-

                                    বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা)

                                    বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ)

                                    বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি)

                                    বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম)

                                    বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট)

                                    বগুড়া-৬ (বগুড়া সদর)

                                    বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)

 

শিক্ষা:-

 সরকারি আজিজুল হক কলেজ
Azizul Hoque College

সরকারি আজিজুল হক কলেজ গেট

Azizul Hoque College

 সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ বগুড়া

 
Mojibur Rahman Government Women College

 বগুড়া জেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে অনেক উন্নত। এ জেলায় রয়েছে উত্তরবঙ্গের ১ম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (রংপুর রোড,গোকুল,বগুড়া)। এছাড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া বাংলাদেশের 
College Campus

একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অত্র জেলায় ১ টি সরকারি মেডিকেল কলেজ (শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ), ১টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ, ১টি বেসরকারী প্রকৌশল কলেজ । ৮ টি সরকারি কলেজ,১ টি 'ল' (আইন) কলেজ,১টি সরকারি মাদরাসা, ৭৬ টি বেসরকারি কলেজ, ১.৫৬৮ টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪০২ টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১,৫৬৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ টি বেসরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়, ১ টি সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, ১ টি ভিটিটিআই, ২ টি পিটিআই, ১ টি টিটিসি ও ১ টি আর্টকলেজ, ১ টি আইএইচটি রয়েছে।

 

চিকিৎসাঃ-

বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি সরকারি হাসপাতাল

Ziya medical

জেলায় মান সম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । জেলায় সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৭ টি এবং এতে চিকিৎসার জন্য বেড রয়েছে ১,২৮০ টি। অনুমোদিত ডাক্তারের জন্য ৩০৬ টি পদ রয়েছে যার মধ্যে ১২১ জন কর্মরত রয়েছে। মোট বেসরকারী হাসপাতাল রয়েছে ১৫৫ টি যেখানে বেড সংখ্য ১,৫০০টি (প্রায়)। 

 

গোকুল মেধ বা বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর

Beholar Bashor Gor
বগুড়া - নামটি শুনলেই প্রথমে মনে আসে লোভনীয় দই-মিষ্টির কথা। তবে এটাই বগুড়ার মূল পরিচয় নয়। বগুড়াকে বলা হয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী ও প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে। বগুড়া তার ইতিহাস আর ঐতিহ্যে এতটাই সমৃদ্ধ যে, ২০১৬ সালে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে ‘সার্ক কালচারাল সেন্টার’ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কোনো একটি দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলকে সার্কের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় মহাস্থানগড় এই স্বীকৃতি অর্জন করে। বগুড়ায় যেসব অসাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে, সেগুলোর অবস্থান কিন্তু প্রায় কাছাকাছি। তাই যে কেউ চাইলেই মোটামুটি দুই দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা করলেই এই স্পটগুলো ঘুরে আসতে পারেন সহজেই। এ ছাড়া মনোমুগ্ধকর যমুনার তীর তো আছেই। যারা এই ধরনের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ পছন্দ করেন, তাদের জন্য তুলে ধরা হলো বগুড়ার উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা। মইনুল হক রোজের সাথে লেখাটিতে সহযোগীতা করেছেন আতিক মোহাম্মদ শরীফ ।

শাহ সুলতান বলখির মাজার

Mohosthan Mazar
মহাস্থানগড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ারের মাজার। কথিত আছে এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশ থেকে মাছের পিঠে চড়ে এখানে এসেছিলেন তিনি। ১২০৫-১২২০ খ্রিষ্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।

গোকুল মেধ বা বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর

গোকুল মেধ বগুড়া সদরের গোকুল গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি মূলত ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেবপাল কর্তৃক নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। মূল স্তূপের পশ্চিমার্ধে প্রচলিত বাসর ঘরের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এ কারণে অনেকের কাছে এটি ‘বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর’ হিসাবেও পরিচিত। এ ছাড়া একে ‘লখিন্দরের মেধ’ নামেও চেনেন অনেকে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অবস্থান মহাস্থানগড় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।
 
 
 
 

 মহাস্থানগড় জাদুঘর



 
Gadugor


মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৬৭ সালে করতোয়া নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি জাদুঘর। পরবর্তী সময়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি দেখাশোনার উদ্যোগ নেয়। সেখানে আছে পুরোনো মাটির মূর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, কালো পাথরের মূর্তি, বেলে পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি, মূল্যবান পাথর, মার্বেল, পোড়া মাটির পুতুল, নানা ধরনের প্রাচীন অলংকারসহ প্রাচীন ও মূল্যবান নিদর্শন। 

মানকালীর কুণ্ড


বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার এক অন্যতম নিদর্শন মানকালীর কুণ্ড। ষাটের দশকের শুরুর দিকে তৎকালীন পাকিস্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মহাস্থানগড়ের উঁচু ঢিলার ওপর বিদ্যমান এই নিদর্শনকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নথিভুক্ত করে। মহাস্থানগড়ের মজা পুকুরের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত মানকালী কুণ্ড ঢিবিতে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে ছোট্ট একটি জলাশয়। এই জলাশয়কে ‘কুণ্ড বা কূপ’ বলা হয়। জলাশয় ও ঢিবিকে একত্রে মানকালীর কুণ্ড নামকরণ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই স্থানে সর্বপ্রথম রাজা মানসিংহ ও তার ভাই তানসিংহ একটি মন্দির নির্মাণ করেন, পরবর্তীকালে ঘোড়াঘাটের জমিদাররা এখানে মসজিদ নির্মাণ করেন।

জিয়ৎ কুণ্ড


এটি মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি কূপ ও অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। লোককাহিনি অনুসারে, এই কূপের পানিতে ছিল অলৌকিক ক্ষমতা। যা পান করলে নাকি মৃত ব্যক্তিও জীবিত হয়ে যেতেন! কথিত আছে, রাজা পরশুরাম যখন শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ারের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তখন রাজা পরশুরাম তার সৈন্যদের এই কূপের পানির মাধ্যমে আবার জীবিত করতেন। 
 
 
Ziyot Kondu

 
 
শাহ সুলতান বলখি এ বিষয়টি জানার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। পরবর্তীকালে নাকি একটি কাক এক টুকরা মাংস মুখে নিয়ে যাওয়ার পথে সেটি কূপে পড়ে যায়। তারপর থেকে কূপটির পানির অলৌকিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

​খেরুয়া মসজিদ


বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল খেরুয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের নামকরণ নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। 
 
Kheruya Mosque
প্রায় ৪৩০ বছর পুরোনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদটি চওড়া দেয়াল এবং মিনারের ভিতের কারণে আজও টিকে রয়েছে। চুন-সুরকির ব্যবহারে তৈরি এই মসজিদের পূর্বদিকের দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। আর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি কারুকার্যখচিত মেহরাব। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে এখনো নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় হয় এবং খেরুয়া মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত রয়েছে।

​পরশুরাম প্যালেস


এটি মহাস্থানগড়ে যেসব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে তার অন্যতম। এটি পরশুরাম প্যালেস নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, এখানে অষ্টক শতক বা পাল আমলের নির্মিত ইমারতের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।

শিলাদেবীর ঘাট


Sheladebir Ghat
 এটি মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ২০০ মিটার পূর্বে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। লোককাহিনি অনুযায়ী, শীলাদেবী ছিলেন রাজা পরশুরামের বোন। শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ার, রাজা পরশুরামকে পরাজিত করার পর শীলাদেবী এই স্থানে জলে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমীতে এই স্থানে স্নান করে থাকেন।

ভাসু বিহার


মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদূরে এটি অবস্থিত। এটি ‘নরপতির ধাপ’ হিসেবেও বেশ পরিচিত ও অন্যতম প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন। ধারণা করা হয়,
 
 
Vashu-bihar

এটি একটি বৌদ্ধ সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সারিয়াকান্দী কালিতলা ঘাট


দেশের অন্যতম বৃহৎ নদী যমুনা বহমান বগুড়ার সারিয়াকান্দী উপজেলার মধ্য দিয়ে। এ নদী ভাঙনপ্রবণ বলে কয়েকটি গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যে গ্রোয়েন বাঁধগুলো দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে।
 
Kalitola ghat

 শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এই বাঁধের অবস্থান। সৌন্দর্যপিপাসুরা প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসেন এবং নৌকা নিয়ে নদী ও চরাঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন। শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ৪০-৪৫ মিনিটে সহজেই যাওয়া যায় এখানে।
 

ঐতিহ্যবাহী উৎসব

পোড়াদহ মেলা


বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মেলার মধ্যে পোড়াদহ মেলা উল্লেখযোগ্য। বগুড়া শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এ মেলা হয়ে আসছে। পোড়াদহ নামক স্থানে মেলা বসে তাই নাম হয়েছে পোড়াদহ মেলা। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে চারশত বছর পূর্বে থেকে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষ্যে এই মেলা হয়ে আসছে। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ দিনের পরবর্তী বুধবারে এই মেলা হয়ে আসছে। 
 
Porahodo Mela

মেলার প্রধান আকর্ষণ বড় মাছ আর বড় মিষ্টি। এছাড়াও থাকে নারীদের প্রসাধন, ছোটদের খেলনা, কাঠ ও স্টিলের আসবাব ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। মেলা প্রধানত একদিনের হলেও উৎসব চলে তিনদিন ব্যাপী। বুধবার মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার একই স্থানে এবং একই সাথে আশেপাশের গ্রামে গ্রামে চলে বউ মেলা। যেহেতু অনেক মেয়েরা মূল মেলায় ভিড়ের কারণে যেতে পারে না তাই তাদের জন্যই এই বিশেষ আয়োজন। বউ মেলায় শুধু মেয়েরা প্রবেশ করতে পারে এবং কেনাকাটা করতে পারে।
 

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব


    মেজর জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১) প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট
    প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮), ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের নেতা
    মোহাম্মদ আলী (মৃত্যু ১৯৬৯), পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
    খাদেমুল বাশার (১৯৩৫-১৯৭৬), বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনী প্রধান
    আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭), সাহিত্যিক ও গল্পকার
    মহাদেব সাহা, সাহিত্যিক
    রোমেনা আফাজ, সাহিত্যিক
    মনোজ দাশগুপ্ত - কবি ও লেখক
    মাহফুজুর রহমান, চেয়ারম্যান, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ
    গাজিউল হক (১৯২৯-২০০৯), ভাষা সৈনিক
    এম. আর. আখতার মুকুল, (১৯২৯-২০০৪), লেখক এবং সাংবাদিক
    জিএম সিরাজ, রাজনীতিবিদ
    মুশফিকুর রহিম, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়
    শফিউল ইসলাম সুহাস- জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়
    অপু বিশ্বাস, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী
    তরুণ মজুমদার, চিত্রপরিচালক
    হোসনে আরা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ
    আলী আকবর, উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
    আবু সাইয়ীদ, চলচ্চিত্র পরিচালক
    মাহমুদুর রহমান মান্না, রাজনীতিবিদ
    আব্দুল মান্নান, সংসদ সদস্য
    কাজী রফিকুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ
    হিরো আলম, চলচ্চিত্র অভিনেতা

 

 

যোগাযোগ ব্যবস্থা:


ঢাকাসহ দেশের যেকোনো জায়গা থেকে বাস অথবা ট্রেনে চড়ে যেতে পারেন বগুড়া। 
 
Bogura Road
 এসআর ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, মানিক এক্সপ্রেস, শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, একতা পরিবহন, ডিপজল এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাসে বগুড়া পৌঁছাতে পারেন। ট্রেনের ক্ষেত্রে ঢাকা-বগুড়া রুটের ‘লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ও বংপুর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর’ ট্রেনেও যেতে পারেন।

থাকা-খাওয়া


বগুড়ায় তারকা মানের হোটেল মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, নর্থওয়ে মোটেলসহ আরো বিভিন্ন হোটেল আছে। 
 
 
Momoin
যেকোনো একটিতে থাকতে পারেন। এ ছাড়া খাবারের জন্য বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত হোটেল আকবরিয়া, শ্যামলী, সেলিম হোটেলসহ নানা মানের হোটেল পাবেন। তা ছাড়া জলশ্বরীতলা মোড়ে বাহারি হরেক রকম খাবারের অসংখ্য দোকান।

বেড়ানোর জন্য বগুড়া দারুণ জায়গা। হাতে সময় থাকলে বেরিয়ে পড়ুন আর ফেরার সময় অবশ্যই এশিয়া সুইটমিটের দই, মিষ্টি বা আকবরিয়ার দই-মিষ্টির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।